অনলাইন গেম আসক্তি: প্রতিকারের উপায় কী?

অনলাইন গেম আসক্তি: প্রতিকারের উপায় কি?

অনলাইন গেম অল্পবয়সীদের মাঝে মারাত্মক নেশার মত জেকে বসেছে। অনলাইন গেম আসক্তি থেকে এখন অভিভাবকরা মুক্তির উপায় খুঁজছেন। অল্পবয়সীরা অনলাইন গেম একবার খেলতে বসলে ডিভাইস থেকে উঠতেই চাইছে না। দিন দিন শিশু-কিশোরদের মাঝে অনলাইন গেম খেলার প্রবণতা বেড়েই চেলেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলের বই সরিয়ে এখন গেমের কিবোর্ড স্থান দখল করছে। তরুণদের ভিতরে অনলাইন গেম খেলার প্রবণতা যতই বাড়ছে অভিভাবকদের উদ্বেগ সাথে সাথে আর বেশি বাড়ছে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন অনলাইনে গেম খেলার মধ্যে আসক্ত হওয়ার উপাদান রয়েছে। যা একটি মানুষের অনেক মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট করে দিতে পারে। অন্য বিষয়ের ওপর মনোযোগ নষ্ট করে দিতে পারে। ক্ষুধামন্দা তৈরি করতে পারে। মাদকের আসক্তির মত এই আসক্তি একটি কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্যহানি করতে পারে। গেম খেলার কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী অনেক রাত জাগে যাতে করে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। মাদকে আসক্তির মত এটিও একটি আসক্তিতে রূপান্তর হয়। তাই কিশোর-কিশোরীদের অনলাইন গেম সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন কাউন্সেলিং। পরিবারের বড় সদস্যদের অনলাইন গেম সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং কিশোর-কিশোরীদের দায়িত্বশীল আচরণে অভ্যস্ত করার জন্য কাজ করতে হবে।

অনলাইন গেমের কনটেন্ট কীভাবে প্রভাবিত করে?

শিশুরা কৌতূহল থেকে অনলাইন গেম খেলা শুরু করে। একসময় তা নেশায় পরিণত হয়। আসক্তরা খাবার, ঘুম, লেখাপড়া ইত্যাদির কথা ভুলে গেম খেলায় ডুবে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন শিশুদের মাঝে স্মার্ট ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১৩-১৭ বছরের শিশুদের অর্ধেক ভিডিও গেম, কম্পিউটার সহ স্মার্ট ফোন ও অন্যান্য স্ক্রিনভিত্তিক প্রযুক্তির সাথে কাটাচ্ছে সপ্তাহে প্রায় ৩০ ঘণ্টা। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের শিশুরাও পিছিয়ে নেই। ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মত গেমে তারা ডুব দিয়েছে। যা সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। অনলাইন গেমগুলো অধিকাংশ মারামারি ও গোলাগুলি নির্ভর। সেখানে একজন শিশু দেদার তার শত্রুকে গুলি করে মেরে ফেলছে। যা তার কোমল মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। এইসব দেখে দেখে শিশু-কিশোররা নানা ধরনের অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে।

অনলাইন গেমের ক্ষতিকর দিক

ইন্টারনেটে বসে গেম খেলায় আনন্দ হয়ত পাওয়া যায়। কিন্তু ক্ষতিকর ও অপরিমিত ব্যবহারের কারণে চিন্তা আর তার আচরণগত পরিবর্তন সাধিত হয়। যা সমাজ ও সংসারে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এবং এই প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এটি যখন তার চিন্তার ওপর প্রভাব বিস্তার করবে তখন তার আচরণেও খারাপ প্রভাব বিস্তার করবে। সামাজিক কাজের দক্ষতা কমিয়ে দেবে। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ দক্ষতা কমিয়ে দেবে। যা প্রতিদিনকার জীবনযাপনের মান খারাপ করে দেবে। অন্যদিকে আসক্তি বাড়ায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মানসিকতা কমে যাচ্ছে। সৃজনশীল সংস্কৃতির দিকে তাদের ঝোঁক কমে যাচ্ছে। অনলাইন গেম অবসাদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। গেমের ভিতরে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ ভালো লাগে, না থাকলেই শরীর ও মনে অস্থিরতা দেখা দেয়। দীর্ঘক্ষণ অনলাইনে থাকলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। ঘুম কম হওয়ার কারণে সারাদিন ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব লেগেই থাকে। সমাজের মূলস্রোতের অনেক বিষয়ের সাথে তারা মানিয়ে নিতে পারে না। যার ফলে অনেক সময় তারা একা হয়ে যায়। তাই সচেতন থাকতে হবে যে, খেলা যেন আসক্তির পর্যায়ে না চলে যায়।

অনলাইন গেম এর নেশা থেকে মুক্তির উপায়?

বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে কোন আসক্তি থেকে বের হওয়া খুব কঠিন। আর অনলাইন গেম আসক্তি থেকে বের হওয়া আরও কঠিন বিষয়। এই আসক্তি দূর করার জন্য অন্য আসক্তি তাদের ভিতরে ধরিয়ে দিতে হবে। ইতিবাচক কাজের আসক্তি। অনলাইনে সময় কমিয়ে দিয়ে তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হন। বিকেল বেলা খেলাধুলা করার জন্য মাঠে নিয়ে যান। খেলাধুলা, সামাজিক কাজ, সৃজনশীল কাজে উৎসাহ ও আগ্রহ প্রকাশ করে তাকে সেই বিষয়ে দক্ষ করে তোলা। গান-বাজনা, ধর্মীয় বিষয়ের সাথে সংযুক্ত করা, আত্মীয়ের বাড়িয়ে ঘুরতে যাওয়ার মত কাজগুলো তাকে অনলাইন গেম খেলা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে পরিমিতি বোধের ডোরে বাধতে পারলেই তবে যে কোন আসক্তি থেকে দূরে থাকা যায়। সচেতন শিক্ষাই পারে এই নেশা থেকে দূরে রাখতে।

Leave a Comment