অতিমাত্রায় আবেগ মানুষের শত্রু। যুক্তিতেই মুক্তি।

অতিমাত্রায় আবেগ মানুষের শত্রু। যুক্তিতেই মুক্তি।

আবেগের ভূমিকা মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে চলাচলের জন্য এটি প্রাথমিক মাধ্যম হয়ে ওঠে। যা আমাদের ঘৃণা, ভালোবাসা, আনন্দ, দুঃখের মতো অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেয়। এটি অবশ্যই ভালো তবে অতিমাত্রায় আবেগ বৃদ্ধি পেলে তা নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে গেলে তখন এই আবেগ মানুষের শত্রুতে পরিণত হয়। তখন এই সময়ে যক্তি ভালো কাজে দেয়। যুক্তি তখন মুক্তির পথ হয়ে উঠতে পারে।

আবেগের সীমাবদ্ধতা

অতিমাত্রায় আবেগের মধ্যে একজন মানুষ সহজেই তার বাস্তবতা, যুক্তিবোধ, এবং সুস্থ চিন্তাভাবনা হারিয়ে ফেলে। অতিরিক্ত রাগ, ক্রোধ, বা দুঃখের কারণে মানুষ অযৌক্তিক কাজ করে বসে। উদাহরণস্বরূপ, রাগের সময় মানুষ এমন কিছু বলে বা করে যা সে কখনো স্বাভাবিক অবস্থায় করে না। একসময় এই কাজ বা কথা অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অপ্রয়োজনীয় আবেগপ্রবণতা শুধু অন্যদের জন্য নয়, নিজের জীবনেও সমস্যা তৈরি করে। মানুষ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

যুক্তির প্রয়োজনীয়তা

যেখানে আবেগ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে, সেখানে যুক্তি তার জন্য মুক্তির পথ দেখায়। যুক্তির সাহায্যে মানুষ চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। এটি তাকে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে এবং কার্যকর উপায়ে সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস এবং প্লেটো যুক্তিকে মানুষের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হিসেবে দেখেছিলেন। তাদের মতে, যুক্তিবোধ মানুষের আত্মিক এবং মানসিক মুক্তির প্রধান উপায়।

আবেগ ও যুক্তির ভারসাম্য

তবে, এটি বলাও ভুল হবে যে আবেগের কোনো গুরুত্ব নেই বা আবেগকে পুরোপুরি দমন করতে হবে। মানুষের জীবন কেবল যুক্তি দ্বারা পরিচালিত হলে তা যান্ত্রিক ও নিরাবেগ হয়ে যেতে পারে। আবেগ আমাদের মানবিকতার অংশ এবং এটি আমাদের জীবনের রঙ ও বৈচিত্র্য প্রদান করে। কিন্তু যুক্তি সেই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। যখন আবেগ যুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে অমিত আবেগের কারণে মানুষের পতন হয়েছে। যুদ্ধ, সংঘাত এবং প্রতিশোধমূলক কার্যকলাপ সাধারণত আবেগের প্রাবল্যে ঘটে থাকে। অন্যদিকে, যুক্তিবোধী নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে। মহাত্মা গান্ধী তার জীবনে শান্তি ও অহিংসার পথে চলার জন্য যুক্তির ওপর জোর দিয়েছিলেন, যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার প্রধান অস্ত্র ছিল।

অতএব, অমিমাত্রায় আবেগ মানুষের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। এটি মানুষের চিন্তা-ভাবনার উপর প্রভাব বিস্তার করে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তি সেই অন্ধকার থেকে মুক্তির উপায়। যুক্তি এবং আবেগের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, যুক্তি মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যায় এবং জীবনকে পূর্ণতা দান করে।

Leave a Comment