ইউটিউব চ্যানেল থেকে কীভাবে আয় করা যায়?

ঘরে বসে ইউটিউব থেকে হাজার টাকা আয় করার উপায়

এই সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ার করার যত মাধ্যম আছে তার মাঝে ইউটিউব সব থেকে জনপ্রিয় মাধ্যম। ইউটিউবের মাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা টাকা আয় করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আপনি চাইলে আপনিও ঘরে বসে ইনকাম করতে পারেন। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সঠিকভাবে একটি চ্যানেলকে তৈরি করা। ভালো মানের ভিডিও বানানো। মানুষের প্রয়োজনে লাগে এমন ভিডিও বানানো। মানুষ আনন্দিত হয় এবং মানুষ সংযুক্ত থাকতে পারে এমন ভিডিও বানানো। অনেকে এলোমেলো ভিডিও তৈরি করে আশা করেন এই প্লাটফর্ম থেকে আয় করবেন। এমনটা ভেবে থাকলে শুরুতেই হোঁচট খাবেন।

ইউটিউব চ্যানেলকে মনিটাইজ করতে চাইলে যে শর্তগুলো প্রাথমিকভাবে মানতে হবে

একটি চ্যানেল করার পর সেই চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার হতে হবে এবং বছরে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম থাকতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু নিয়ম আছে সেগুলোও মানতে হবে।
১. একটি চ্যানেলে একই ভিডিও একাধিকবার আপলোড করবেন না।
২. অপরের ভিডিও আপনার চ্যানেলে আপলোড দেবেন না।
৩. ইউটিউবে পূর্বে আপলোড করা আছে এমন ভিডিও হুবহু আপনার চ্যানেলে আপলোড দেবেন না।
৪. অন্যের কপিরাইট গান ও ভিডিও নিজের চ্যানেলে আপলোড করবেন না।
তাছাড়া আরও অনেক নিয়ম আছে। আপনি যদি সঠিক উপায়ে আপনার চ্যানেলকে দাঁড় করাতে চান ইউটিউবের গাইডলাইনগুলো ভালোকরে পড়ে নিবেন। ইউটিউব চায় আপনি আপনার মেধা খরচ করে ইউনিক ভিডিও তৈরি করুন।

যে ভডিও আপলোড করবেন না

মারামারি, কাটাকাটি, কিংবা যে ধরনের ভিডিও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে সেই ধরনের ভিডিও আপনার চ্যানেলে আপলোড করবেন না। এই ধরনের ভিডিও আপলোড করলে আপনার চ্যানেল ইউটিউব যেকোন সময় বন্ধ করে দিতে পারে।

ভিডিও আপলোড করার নিয়ম

ভিডিও আপলোড করার জন্য একটি দিন নির্ধারণ করুন। যেমন শনিবার হতে পারে। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় আপনার ভিডিও আপলোড দিন। বাংলাদেশে শুক্র ও শনিবার অফিস-আদালত বন্ধ থাকে। মানুষ বাসায় থাকে। তাই এই দিনে ভিডিও আপলোড দিলে বেশি মানুষের কাছে আপনার ভিডিও পৌছে যেতে পারে। তাছাড়া আপনার দর্শকশ্রেণি তৈরি হলে তারা বুঝতে পারবে এই চ্যানেলে নির্দিষ্ট দিনে ভিডিও আপলোড হয়। তখন তারাও অপেক্ষায় থাকবে। এভাবে কমিউনিটির সাথে এনগেজমেন্ট বেড়ে যাবে। চ্যানেল দ্রুত গ্রো করবে। একদিন একাধিক ভিডিও আপলোড না করে নিয়মিত বিরতি দিয়ে ভিডিও আপলোড করলে চ্যানেল দ্রুত দাঁড়িয়ে যায়। এই কৌশলে ভিডিও আপলোড করলে চ্যানেলের ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

লাইক, শেয়ার ও কমেন্টের জন্য বলুন

ভিডিও এডিট করার সময় আপনার ভিউয়ারদের উদ্দেশ্যে লাইক, কমেন্ট ও সাবস্ক্রাইব করার জন্য অনুরোধ করুন। সেটা আপনি মুখেও বলতে পারেন। বা ভিডিওতে লোয়ার ব্যনার ব্যবহার করেও চাইতে পারেন। এতে করে দ্রুত চ্যানেলের লাইক কমেন্ট ও শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইবার বেড়ে যায়। ইউটিউব বুঝতে পারে আপনার চ্যানেল দর্শকদের ভালো লাগছে। এবং ইউটিউব নিজ থেকেই আপনার ভিডিও প্রচার করে থাকে।

ইউটিউব চ্যানেলের জন্য এসইও করুন এবং সঠিকভাবে চ্যানেলের বর্ণনা লিখুন

ইউটিউব চ্যানেলটি র্যা ঙ্ক না হলে এই চ্যানেল থেকে ভালো ফল পাওয়া যায় না। তাই ইউটিউব চ্যানেলকে এনইও করতে হবে। প্রতিযোগিতার বাজারে আপনাকে এগিয়ে যেতে হলে এসইওর বিকল্প নাই। একটি চ্যানেল সার্চের প্রথম দিকে আসার জন্য চ্যানেলের ভালো একটি ডেসক্রিপশন লেখা খুব জরুরি।

চ্যানেলের ডেসক্রিপশন হচ্ছে- আপনার চ্যানেল সম্পর্কে ছোট একটি বিবরণ। আপনার চ্যানেলটি আসলে দর্শকে কি দেখাতে চায়। এটা কি বিষয়ের ওপর, এখান থেকে দর্শক কী কী শিখতে পারবে, কী ধরণের বিনোদন পাবে। অর্থাৎ আপনি এই চ্যানেলে কোন ধরণের ভিডিও আপলোড করবেন সেই বিষয়ে বর্ণনাই হলো চ্যানেলের ডেসক্রিপশন।

বর্ণনাটি এমনভাবে লিখুন যাতে করে মানুষ সহজেই বুঝতে পারে আপনার চ্যানেলের ধরণ কী। মানুষ অনেক সময় চ্যানেলের এবাউট সেকশন পড়ে চ্যানেল সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিতে চায়। কিন্তু আমরা এই বিষয়ে অনেকসময় উদাসিন থাকি। আপনার চ্যানেলের মূল কিওয়ার্ড বর্ণনায় রাখতে পারেন। এতে করে চ্যানেল র্যায়ঙ্কের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চ্যানেল তৈরির পূর্বে যা ভাবা উচিত

হ্যাঁ ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। কিন্তু এমন না যে আপনি ভিডিও দিলেই ইনকাম শুরু হয়ে যাবে। আপনার দর্শক শ্রেণি তৈরি করতে হবে। যারা নিয়মিত আপনার ভিডিও দেখবে। তাই চ্যানেল তৈরির পূর্বে সেই বিষয়ে ভিডিও করার জন্য নিজেকে তৈরি করুন যে বিষয়টি আপনি ভালো পারেন। এবং দর্শকরা আপনার ভিডিও দেখে বলবে না যে- সময় নষ্ট হয়েছে।

ভিডিও তৈরি করার ডিভাইস সম্পর্কে ভাবুন। একটি ভালো মোবাইল ফোন আপনাকে ভালো সুবিধা দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে তাই নিয়ে নেমে পড়তে পারেন। তবে ভালো মাইক্রোফোন ও সাউন্ড না হলে মানুষ ভিডিও দেখে মজা পায় না তাই প্রথমেই সাউন্ডের কথা ভাবুন। লাইট কন্ডিশনের কথা ভাবুন। চ্যানেলটি একটু দাঁড়িয়ে গেলে ভালো মানের ক্যামেরা কিনতে পারেন। ইদানিং কম বাজেটে ভালো মানের মিররলেস ক্যামেরা পাওয়া যায়। যা দিতে পারে ঝকঝকে ভিডিও। এবং এগুলোতে ভালো অটোফোকাস সিস্টেম থাকায় ভিডিওর মানও হয় ভালো।

ভিডিও পোস্ট করার সাথে সাথে প্লে লিস্টের সাথে আপনার ভিডিও সংযুক্ত করুন। এবং আপনার ভিডিও জন্য কিওয়ার্ডগুলো দিতে হবে। এগুলো আপনার ভিডিও সার্চে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করে থাকে। আপনার ভিডিওগুলো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। নিজের ব্লগ থাকলে সেখানে শেয়ার করতে পারেন। কিংবা ভিডিওর জন্য আলাদা ওয়েবসাইটে প্রচার করতে পারেন।

ইউটিউব স্টুডিও YouTube Studio

ইউটিউব স্টুডিও মোবাইল ফোনে নামিয়ে নিয়ে আপনার চ্যানেলের বিভিন্ন স্ট্যাটিসস্টিকস দেখতে পারেন। চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু হলে এখান থেকে ভিডিওর মনিটাইজেন চালু ও বন্ধ করতে পারেন। এখানে আপনি আপনার চ্যানেলের ইনকামও দেখতে পাবেন।

ইউটিউবের নিজেস্ব মনিটাইজেশন ছাড়াও অন্য উপায়ে ইনকাম করা যায়

ইউটিউব চ্যানেলকে বিভিন্ন পার্টনার প্রোগ্রামের সাথে সংযুক্ত করে আপনি টাকা ইনকাম করতে পারেন। ফ্যান ফান্ডিং করেও ইনকাম করা যায়। চ্যানেলে রেগুলার কিছু দর্শক আসা শুরু হলে কিছু সাইট থেকে ইনকাম করা যায়। সাইটগুলো হলো- Tipee, Patreon, Buy Me A Coffee

কতভিউ থেকে কত টাকা দেয় ইউটিউব

এই প্রশ্নটা অনেকেরই থাকে যে, কত ভিউ হলে কত টাকা পাওয়া যায়। ইউটিইব চ্যানেলটি ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত থাকেলে ১০০০ ভিউ থেকেই ইনকাম শুরু হয়। তবে বাংলা কনটেন্টের জন্য ভালো টাকা ইনকাম করতে চাইলে অন্তত এক লক্ষ ভিউ প্রয়োজন হয়। কত ভিউ থেকে কত টাকা আসবে তা নির্ভর করে আপনার ভিডিও কোন দেশ থেকে দেখা হচ্ছে। ভিডিওর কনটেন্ট কী বিষয়ে তার ওপর। ফাইনান্স, ইন্সুরেন্স, টেক বিষয়ক ভিডিও থেকে ভালো টাকা ইনকাম করা যায়। কারণ এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে এবং তার রেট একটু বেশি হয়ে থাকে। তাই বলা যাবে না যে, প্রতি এক লক্ষ ভিউ থেকে সব ভিডিও এক রকম ইনকাম করবে।

ইউটিউব চ্যানেলের ক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো অবশ্যই মানতে হবে

পূর্বেই বলেছি চ্যানেলে নিজের তৈরি ভিডিও দিবেন। ভিডিওতে ব্যবহার করা মিউজিক বা গান থাকতে হবে মেধাস্বত্বহীন। অন্যর ভিডিও বা অডিও ব্যবহার করলে আপনার ভিডিও রিইউজ কনটেন্ট হিসেবে দেখবে এবং ইউটিউব অভিযোগ পেলে আপনার চ্যানেল বন্ধ হয়ে যেতে পারে সাথে সাথে মনিটাইজেশন তো যাবেই।

ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইন আছে। সেগুলো ভালো করে দেখে নিতে হবে। তা না হলে কমিউনিটি স্ট্রাইকে আপনার ভিডিওর খারাপ অবস্থা হয়ে যাবে। প্রতারণামূলক তথ্য, রক্তপাত, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরি করে এমন শব্দ বা বিষয়, ভুল তথ্যবিষয়ে কনটেন্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। রিপোর্ট হলে আপনার আম ছালা দুটোই যাবে।

মনিটাইজেশন হওয়ার জন্য এক হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। এবং বিগত এক বছরে কমপক্ষে চার হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। চ্যালেছে দ্বিস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা দিতে হবে। মনিটাইজেশনের জন্য আবেদনের জন্য পূর্বেই গুগলের এ্যাডসেন্স একাউন্ট খুলতে হবে। তবে আপনার পূর্বে কোন এ্যাডসেন্স একাউন্ট থাকলে তার সাথেও সংযুক্ত করে নেওয়া যাবে। মানিটাইজেশন চালুর পর ১০ ডলার হলে এ্যাডসেন্স থেকে আপনার দেওয়া ঠিকানায় পিন যাচাইকরণ একটি কোড পাঠাবে ডাকযোগে। কোডটি দিয়ে এ্যাডসেন্স একাউন্ট যাচাই করে নিতে হবে। এ্যাডসেন্স একাউন্টে ব্যাংক এ্যাকাউন্টের তথ্য দিতে হবে। একাউন্টে ১০০ ডলারের বেশি যোগ হলে প্রতিমাসে আপনার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে টাকা তুলে নিতে পারবেন।

2 thoughts on “ইউটিউব চ্যানেল থেকে কীভাবে আয় করা যায়?”

Leave a Comment