কীভাবে ই-পাসপোসর্ট করবেন?

কীভাবে ই-পাসপোসর্ট করবেন?

ই-পাসপোর্ট করার পূর্বে জেনে নেওয়া উচিত কী কী ধরণের কাগজপত্র লাগে। এই বিষয়ে ভালোভাবে না জানার কারণে অনলাইনে আবেদন পত্র পূরণ করার পর আমাদের পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। পাসপোর্ট করার জন্য যে কাগজগুলো লাগবে সে সম্পর্কে সর্বশেষ যে নির্দেশনা এসছে তা জেনে নেওয়া ভালো। গ্রামের বাড়ি থেকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে একাধিক বার যাতায়াত করার থেকে একবারে কী কী কাগজ লাগবে তা জেনে পাসপোর্ট করতে এলে সময় ও ঝামেলা উভয়ই কম লাগে। তাই পাসপোর্ট করার জন্য কী কী কাগজ লাগবে সে সম্পর্কে জেনে নিই।

ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জগতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। নতুন পাসপোর্ট করার জন্য কিছু কাগজ জমা দিতে হবে পাসপোর্ট অফিসে। কাগজগুলো হচ্ছে-
১. ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা স্মার্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি
২. পরিচয় পত্রের মূল কপি
৩. ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য জন্ম-নিবন্ধন সনদ
৪. বাচ্চাদের জন্য বাবা ও মায়ের ছবি ও পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে।

ই-পাসপোর্ট করতে কী কী লাগে

বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্য মতে ই-পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। তার সাথে নাগিরকত্বের সনদ ও পেশা প্রমাণের জন্য প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের ই-পাসপোর্ট করার জন্য সরকারি অথরাইজেশন লেটার বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। ই-পাসপোর্টের আবেদন করার পর অনলাইনে অথবা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। এর পর পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়ার জন্য সকল কাগজ একত্রিত করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট করার জন্য যে কাগজগুলো প্রয়োজন

যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের জন্য ই-পাসপোর্ট করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে তা আগেই বলেছি, নাগরিকত্ব সনদ, পেশাজীবীদের জন্য পেশাজীবী প্রমাণের সনদ এবং ২০ বছর বয়সের কম বয়সী যাদের এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি তাদের জন্য অনলাইন জন্ম সদন প্রয়োজন হবে।

১. ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে বসেই করা যাবে।
২. ই-পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে কোন কাগজের সত্যায়ন করতে হবে না।
৩. ই-পাসপোর্টের ফরমে কোন ছবি সংযোজন করতে হবে না এবং সত্যায়ন করতে হবে না।
৪. জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন (ইংলিশ ভার্সন) অনুযায়ী ফরম পূরণ করতে হবে।
৫. ১৮ বছরের কম বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (যার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই) তার পিতা অথবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার অবশ্যই লিখতে হবে।
৬. জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ যে বয়সে দাখিল করতে হবে-
ক. ১৮ বছরের নীচে হলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ
খ. ১৮-২০ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ
গ. ২০ বছরের উপরে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হবে। তবে বিদেশ থেকে বাংলাদেশ মিশনে আবেদন করলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া যাবে।
৭. ফরমের ভিতরে তারকাচিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
৮. দত্তক/অভিভাকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের সাথে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত আদেশ দাখিল করতে হবে।
৯. আবেদনের বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ঠ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস/আঞ্জলিক পাসপোর্ট অফিস/বিদেশস্ত বাংলাদেশ মিশনে দাখিল করতে হবে।
১০. প্রাসঙ্গিক ট্যাকনিক্যাল সনদ আপলোড করতে হবে।
১১. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও এবং এনওসি সনদ, অবসরোত্তর ছুটির আদেশ, পেনশন বই আপলোড/সংযোজন করতে হবে যা ইস্যুকৃত কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে আপলোড থাকতে হবে।
১২. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
১৩. দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে সরকারি নির্ধারিত ফি এর ওপর ভ্যাট সহ অন্যান্য চার্জ দিতে হবে এবং বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
১৪. কুটনৈতিক পাসপোর্টের জন্য পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেরার উইং অথবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরারর আবেদন দাখিল করতে হবে।
১৫. বৈদেশিক মিশন হতে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানার কলামে বাংলাদেশের যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
১৬. অতি জরুরী পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে (নতুন ইস্যু) নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবশ্যিকভাবে আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে।

শিশুদের পাসপোর্ট করতে কী কী লাগবে

শিশুদের পাসপোর্ট করার জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধনের সাথে সাথে বাবা-মা এর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংযুক্ত করতে হবে।
১. অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
২. বাবা-মা এর এনআইডির ফটোকপি
৩. অনলাইন এপ্লিকেশন সামারি
৪. এপ্লিকেশন ফর্ম
৫. পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান
৬. থ্রি আর সাইজের ছবি ল্যাবে প্রিন্ট করা, যাতে গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে।

ই-পাসপোর্টের আবেদন করবেন যেভাবে

ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হলে আপনাকে (www.epassport.gov.bd) এই ওয়েবসাইটে লগেইন করতে হবে। ওয়েব সাইটে ঢুকে ডিরেক্টলি টু অনলাইন এ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করতে হবে। প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। তৃতীয় ধাপে মেয়াদ ও পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফি জমা দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে যে কোন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। কিংবা অধিদপ্তরের অনুমোদিত পাঁচ ব্যাংকের যে কোন একটিতে টাকা জমা দিয়ে সেই জমা স্লিপের নম্বর দিতে হবে। এরপর ফাইল সাবমিট করতে হবে। ফাইল সাবমিট করলে আপনার তথ্য পাসপোর্ট কার্যালয়ের সার্ভারে জমা হবে। পরবর্তী ধাপে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। শেষ ধাপে ই-পাসপোর্ট তৈরি হওয়ার পর আবেদনকারীকে জানিয়ে দেওয়া হবে। আবেদনকারী নির্দিষ্ট দিতে উপস্থিত হয়ে ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করবেন।

অনলাইন ছাড়াও আবেদন ফরম পূরণ করা যাবে

পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্টের কাগজের ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করার পর জমা দিলেও ই-পাসপোর্ট করা যাবে। আবেদন ফরমে আবেদনকারীর কাছ থেকে ৮৭ ধরনের তথ্য চাওয়া হবে। এমআরপি তেকে এই ফরম কিছুটা আলাদা হবে। এই ফরমে পাসপোর্টের মেয়াদ ও পাসপোর্টের পাতার সংখ্যার তথ্য জানতে চাওয়া হবে। সাধারণত পাসপোর্টের মেয়াদ ৫-১০ বছরের হয়ে থাকে। এবং পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা ৫ বছরের জন্য ৪৮ পাতা ও ১০ বছরের জন্য ৬৪ পাতা হয়ে থাকে।

Leave a Comment