কীভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়া যায়

গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলে কী শিখতে হবে?
সুন্দর রং আর সুন্দর ডিজাইন দেখে সবাই মুগ্ধ হয়। একটি ব্যবসা কিংবা প্রচারণার প্রধান দিক হল সুন্দর প্রচারপত্র তৈরি। সুন্দর লগো তৈরি। সাথে রয়েছে ব্যানার, লিফল্যাট, বিজনেস কার্ড ইত্যাদি তৈরির কাজ। ওয়েব পেজের জন্য লগো, সুন্দর ব্যানার ডিজাইন, ওয়েব সাইটের ল্যাআউট তৈরিতেও গ্রাফিক্স বড় ভূমিকা নিয়ে থাকে। ইদানিং ইউটিউব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইন্টারএ্যাকটিভ লার্নিং ভিডিওতে কার্টুন ও এ্যানিমেশন এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে এগুলোও গ্রাফিক্সের একটি শাখা। ছবিকে সুন্দর করে সম্পাদনার কাজও গ্রাফিক্স এর অংশ। বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে গ্রাফিক্স এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে ইলাস্ট্রেটর ও ফটোশপের কাজ অনেক পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে অনেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাসে 40-50 হাজার টাকা ইনকাম করতে পারে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে কাজ করে। তাছাড়া দেশের ভিতরেও ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনারের অনেক চাহিদা।

ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার শর্ত
ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সৃজনশীল চিন্তার মানুষ হতে হবে। রং, বিভিন্ন প্যাটার্ন, ট্যাক্স সাজানো ইত্যাদিতে দেখাতে হবে মুন্সিয়ানা। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে প্রচুর ধৈর্য থাকতে হবে। আর যা শিখবেন তাতে মাস্টার হয়ে তবে ছাড়বেন। অনেক সফটওয়্যার সম্পর্কে জানলেন কিন্তু সেগুলোতে ভালোভাবে কাজ করতে পারলেন না। তবে কোন লাভ নেই। যা শিখবেন পরিপূর্ণ রূপে শিখবেন। ফটোশপ আর ইলাস্ট্রেটর এর সমন্বয়েই অনেক কাজ করা যায়। সুতরাং প্রাথমিক অবস্থায় গ্রাফিক্স এর কাজ শিখলে ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটর এর কাজটা ভালোভাবে রপ্ত করুন। এই দুই সফটওয়্যারের সব টুলগুলো আঙ্গুলের ডগায় তুলে আনুন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য ব্যবহার হয় এমন কিছু সফটওয়্যার
ফটোশপ, ইনডিজাইন, ইলাস্ট্রেটর, লাইটরুম ইত্যাদি।

লেটেস্ট সফটওয়্যার এর ব্যবহার করুন
বাংলাদেশে অনেক প্রেসে কাজ করার জন্য পুরনো সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আপনি লেটেস্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। কারণ কোনভাবে যদি আপনি একজন দক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে যান এবং আউটসোর্সিং এর কাজ করেন তখন আপনাকে হালনাগাদ সফটওয়্যারে কাজ করতে হবে। কারণ দেশের বাইরের বায়ারদের এমনই চাহিদা থাকে।

ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার কারা হয়?
যাদের এই কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে তারাই গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে পারে। যে কখনই রঙ নিয়ে ভাবেনি। আঁকা সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। ডিজাইনের প্রতি যার কখনো কোন আগ্রহ ছিলো না তার গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়াটা কঠিন। এই মার্কেটে কাজ আছে। আর টাকা কামানো যাবে এই চিন্তা থেকে এখানে এসেই সফল হওয়া যাবে না। রং, ডিজাইন, আঁকাআঁকি সম্পর্কে আগ্রহ থাকতে হবে তবেই সে ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে পারবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কোথা থেকে শেখা যায়?
বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের। তবে এই সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে শিক্ষকের দক্ষতা যাচাই করেই ভর্তি হওয়া ভালো। আজকাল ইউটিউব ভালো ভূমিকা রাখে শিখনে। আপনার যদি ভালো ইন্টারনেট এক্সেস থাকে তবে আপনি কী শিখতে চান সে সম্পর্কে ইউটিউব থেকে সার্চ দিয়ে ভিডিও দেখে দেখে শিখতে পারেন। দেখার সময় অবশ্যই স্টেপগুলো খাতায় লিখে রাখবেন এবং কম্পিউটারে বসে দেখানো প্রজেক্ট হুবহু বানাতে চর্চা করবেন। চর্চা ছাড়া কেউ কোনদিন ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে পারেনি। তবে আপনি যদি প্রেসের গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে কোন প্রেসে সিনিয়র ডিজাইনারের সহযোগী হিসেবে যোগ দিয়ে ভালোভাবে গ্রাফিক্স এর কাজ শেখা যায়। সেক্ষেত্রে প্রেসের জন্য হাতেকলমে কীভাবে ডিজাইন করতে হবে তা শেখা যায়। ভিডিও দেখে যদি এক ঘন্টা ব্যায় করে তবে অন্তত দুইঘন্টা একই প্রজেক্ট বার বার চর্চা করতে হবে। আজকাল গুগল বেশ ভালো বন্ধু রূপে এসেছে। কোন কিছুতে আটকে গেলে গুগলকে বলুন সে নানা ধরণের সমাধান তুলে ধরবে। ইন্টারনেট জগতে ফ্রি ছবি শেয়ারের নানা সাইট আছে সেখান থেকে ছবি সংগ্রহ করে কাজ করতে পারেন।

ডিজাইনের আইডিয়া কোথা থেকে পাবেন?
এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে সহযোগিতা করবে। ইন্টারনেটে রয়েছে নানা ধরনের ডিজাইন এর ধারনা। আপনি গুগলে সার্চ করে দেখবেন নানা ধরণের লগো, ফ্লেয়ার, পোস্টার, ফটো রিটাচের ছবি। সেখান থেকে আইডিয়া গ্রহণ করে নিজের মত করে ডিজাইন করুন। সেখান থেকে বুঝতে পারবেন আন্তর্জাতিকভাবে কীধরনের রং, শেপ কীভাবে কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে। আউটসোর্সিং এর জন্য ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে বিদেশি ক্লায়েন্টরা কী ধরনের রং পছন্দ করে বেশি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানির লগো দেখে দেখে সেরকম লগো বানানোর চেষ্টা করবেন। আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন এই কাজগুলো করতে গিয়ে আপনি কোনটা পারছেন না। এই না পারা বিষয়গুলো খাতার লিখে ফেলুন। এবং গুগলে, ইউটিউবে সার্চ দিয়ে কৌশলগুলো দেখুন আর সাথে সাথে নিজেও চর্চা করুন। অনেকে দেখে কিন্তু সাথে সাথে চর্চা করে না। তাদের এই দেখায় কোন লাভ হয় না।

আউটসোর্সিংয়ের জন্য বাড়তি কী জানতে হবে?
যেহেতু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগ করতে হলে ইংরেজিতেই করতে হবে। তাই ভালো ডিজাইনার হওয়ার পাশাপাশি আপনাকে ইংরেজিতে যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে নিজের সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এবং সেখানে আপলোড করতে হবে আপনার সেরা কাজগুলো। আশা করি একজন ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলে আপনার আর বসে থাকতে হবে না। জব মার্কেটে আপনার জন্য অনেক কাজ বসে আছে। সুতরাং বিলম্ব না করে এখনই বসে যান ফটোশপ আর ইলাস্ট্রেটরকে বন্ধু বানিয়ে।

Leave a Comment