প্রতিবেদন লেখার কৌশল ৪

প্রতিবেদন লেখার কৌশল ৪
পূর্বে প্রতিবেদন লেখার বিভিন্ন ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একটি আদর্শ প্রতিবেদনে আরও যেসকল উপাদান থাকতে হয় তা হলো:

আবার ও স্মরণ করছি-
প্রতিবেদন তৈরী করার সময় মনে রাখার প্রয়োজন
১. প্রতিবেদন বাস্তব ঘটনা ও যথার্থ তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরী করতে হবে।
২. প্রতিবেদন উপস্থাপনা ষ্পষ্ট ও বোধগম্য হতে হবে ।
৩. প্রতিবেদন অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বিবর্জিত ও সংক্ষিপ্ত হতে হবে।
৪. প্রতিবেদনের ভাষা হতে হবে দৃঢ় কিন্তু শ্রুতিমধুর ।
৫. প্রতিবেদনটি যেন পক্ষপাতদুষ্ট না হয় সে চেষ্টা করতে হবে ।
৬. প্রতিবেদনের উপস্থাপনা হবে সহজ ও অনাড়ম্বর ।
৭. প্রতিবেদনের উপস্থাপনা আকর্ষনীয় হতে হবে ।
৮. প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট কাঠামো থাকতে হবে ।
৯. সুপারিশ প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণ করে ।

প্রতিবেদন সুলিখিত করার পন্থা-
১. বাক্য ও অনুচ্ছেদকে সংক্ষিপ্ত করা
২. পুনরুক্তি বর্জন করা ।
৩. ভাষার জটিলতা পরিহার করা ।
৪. প্রত্যক্ষ্য উদ্ধৃতি ব্যবহার করা ।
৫. জনপ্রতিক্রিয়া তুলে ধরা ।
৬. না- বলে, করে দেখানো ।

একটি আদর্শ প্রতিবেদনে কেস স্টাডি দিতে হয়।
কেস স্টাডি কি?
‘কেস’ মানে ঘটনা। আর ষ্টাডি হচ্ছে অধ্যায়ন বা বিশ্লেষণ। সুতরাং বলা যায় – কেস ষ্টাডি হচ্ছে একটি ঘটনার বিশ্লেষণ।
সাধারনভাবে কেস ষ্টাডি হচ্ছে কোন একটি সফলতা, ব্যর্থতা, আশা-আখাংকা, সুখ দুঃখ বা বঞ্চনার বাস্তব কাহিনী যা অন্যের কাছে দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরার জন্য সহজ ও বোধগম্য ভাষায় লেখা হয়।

কোন কোন সময় কেস ষ্টাডি হয়ে ওঠে এমন সব মানবিক আবেদনপূর্ণ রচনা যা পাঠক মনকে নাড়া দেয়, পাঠককে মুগ্ধ করে, এমনকি নতুন পথেরও দিক নির্দেশনা দেয়।

উন্নয়নমূলক কেস ষ্টাডিতে তুলে ধরা হয় উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত মানুষের জীবন সংগ্রাম, সুখ-দুঃখ, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, সুবিধা-অসুবিধা, অভাব-অনটন, আশা-আকাংখা বা সফল কোন উদ্যোগের কথা। এছাড়া যারা উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে লাভবান হয়েছে এবং যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে- এ দুপক্ষের কথাই ওঠে আসতে পারে একটি কেস ষ্টাডিতে।

শুধুমাত্র কোন ব্যক্তিকে ঘিরেই নয় ; যে কোন ঘটনা, সম্মিলিত ব্যক্তিগত উদ্যোগ, প্রতিষ্ঠান, সংগঠনকে কেন্দ্র করে একটি কেস ষ্টাডি লেখা যেতে পারে। তীক্ক্ষন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও ভাষার গাঁথুনি দিয়ে বিষয়টি এমন ভাবে বর্ণনা করতে হয় যাতে পাঠক ঘটনাটি কে তাদের মনের চোখ দিয়ে দেখতে পায়।

একটি কেস স্টাডি লেখার পূর্বে যা করতে হয়:
১. চেক লিষ্ট তৈরি করা
২. সরেজমিন পরিদর্শন
৩. তথ্য সংগ্রহ (প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি সোর্স থেকে)
৪. সাক্ষাৎকার গ্রহণ
৫. তথ্য যাচাই
৬. তথ্যের সুশৃংখল বিন্যাস
৭. তথ্য পরিবেশনের কৌশল নির্ধারন

কেসস্টাডি শুরুর পদ্ধতি
নিম্নলিখিত কয়েকটি পদ্ধতিতে কেস ষ্টাডি শুরু করা যায়।তবে এগুলোই স্বত:সিদ্ধ কোন পদ্ধতি নয়। একজন উন্নয়ন কর্মী তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিষয়টিকে যে কোন ভাবে বর্ণনা করতে পারেন।

১. উদ্বৃতি সূচনা:
‘আগে দুই বেলা ভাত খাইতে পারতাম না। অহন তিনবেলা পেটভরে খাইতে পারি’। কথাগুলো বললেন চল্লিশোর্ধ মাজেদা বেগম। … জেলার …. উপজেলার …. গ্রামে তার বাড়ি।

২. বৈশাদৃশ্য সূচনা :
তিন বেলাতো দূরের কথা, এক বেলাও ঠিকমতো খাবার জুটতো না মিলন বালার। … সদর উপজেলার …. গ্রামের সেই মিলন বালা এখন ছেলেপুলে নিয়ে তিনবেলা পেট ভরে খেতে পারেন। বেসরকারি সংস্থার ক্ষুদ্র ঋণ সহযোগিতা আর নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাড়িতে বসেই মাসে দু-তিন হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন তিনি।

অথবা
আর দশটা মেয়ের মতো হলে পারতেন না। একটু ব্যতিক্রম বলেই হয়তো সাফল্যেও সিঁড়ি অতিক্রম করতে পেরেছেন চানবানু।

৩. দ্বিমূখী সূচনা:
পরিশ্রম আর অদম্য আগ্রহের ফলে আটপাড়ার বানিয়াজান গ্রামের রেহেনা বেগম এখন একজন সফল ফেরী ব্যবসায়ী। ভবিষ্যতে নিজ বাড়িতে একটি মনোহারী দোকান দিতে চান তিনি। তিনি বলেন, ”চেষ্টা করলে মানুষ তার ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারে”।

৪. ক্ষুদ্র বাক্য সূচনা :
চানবানু। স্বামী আব্দুল গফুর। বাড়ি … জেলার… উপজেলার চানগাঁও গ্রামে। ছয় বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। তখন স্বামী ছিলেন বেকার। সংসার ছিল অস্বচ্ছল। তিনবেলা খাবার জুটতো না ঠিকমতো। কিন্তু আজ আর সেই দিন নেই। গৃহবধূ চানবানু এখন একজন কর্মজীবী নারী।

৫. প্রশ্ন সূচনা :
হতভাগী তাহেরা এখন কোথায় যাবেন।স্বামীর; নাকি বাবার বাড়িতে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে তিনি এখন দিশেহারা।

৬.দৃশ্য সূচনা :
প্রতিদিন সকালে এব ঝাঁপি চুরি, ফিতা, প্রসাধনী আর খেলনা সামগ্রী মাথায় নিয়ে যে মেয়েটি গ্রাম-গ্রামান্তর ঘুরে বেড়ায়- তার নাম কোহিনূর। … উপজেলার … গ্রামে তার বাড়ি।

Leave a Comment