ফল কেন খাবেন? এবং ফল খাওয়ার কী উপকারিতা রয়েছে?

ফল কেন খাবেন?

ফল আমাদের অনেক ভিটামিনের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। আমরা অনেকে ফল খেতে চাই না। কিংবা বাড়ির আঙিনায় ফলের গাছ না লাগিয়ে এক ধরণের কাঠের গাছ লাগাই। কিন্তু খুব সহজেই বাড়িতে কাঠের গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ লাগালে পরিবারের সকল সদস্যর পুষ্টি চাহিদা খুব সহজেই মিটে যেতে পারে। আমরা আজকে দেখবো কোন ধরনের ফলে কী ধরনের উপকার রয়েছে।

তরমুজ কী উপকার করে?

তরমুজ সবারই প্রিয় ফল। তরমুজের ৯২ ভাগ পানি, ৬ ভাগ চিনি এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে ২ ভাগ। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। তরুমুজ ক্ষতিকর কোলেস্টোরল দূরে রাখে, কোলেস্টেরল হার্টের বড় শত্রু। তাছাড়া তরমুজে টিট্রোলিন হার্টের জন্য খুব ভালো। গরমের দিনে তরমুজের পানি শরীরকে ঠান্ডা রাখে। তরমুজ হজম ক্ষমতা বাড়ায়। তরুমুজের এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তরমুজে আছে ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটিমিন বি৬ যা শরীরে এ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে। এর ফলে শ্বেত রক্তকণিকা সঠিক পরিমাণে তৈরি হয়। তরমুজকে প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা বলা হয়ে থাকে। তরমুজ দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে। পেশির বেদনা উপশমে কাজ করে। তরমুজে থাকা ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি ত্বক সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি ত্বককে কোমল ও চুল শক্ত রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ভিটামিন এ ত্বকে নতুন কোষ গঠনের পাশাপাশি কোষের ক্ষতি পূরণে সহায়তা করে।

কাঁঠালের গুণাগুণ

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল, বাংলাদেশের সবস্থানেই কম-বেশি কাঠাল পাওয়া যায়। বসন্ত ও গ্রীষ্মের প্রথমে কাঁচা ফল পাওয়া যায়। বর্ষায় পাওয়া যায় পাকা কাঠাল। এই ফল প্রচুর আষ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। কাঠালের 4-5 টা কোয়াতে ১০০ কিলো-ক্যালরি খাদ্য শক্তি পাওয়া যায়। কাঠালের হলুদ রঙের কোষে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ। ২-৩ টি কাঠালের কোষ আমাদের একদিনের ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে। কাঠাল অপুষ্টিজনিত সমস্যা রাতকানা ও রাতকানা থেকে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে পারে। শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষের জন্য কাঠাল খুব উপকারী ফল। কাঠাল ত্বকের লাবন্য ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করে। এছাড়া কাঠালে কিছু পরিমাণ ভিটামিন সি এবং কিছুটা বি পাওয়া যায়। পাকা কাঠালে যেমন উপকার পাওয়া যায় কাঁচা কাঠালও কিন্তু কম যায় না। কাঁচা কাঁঠাল আমিষ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ তরকারি। পাকা কাঁঠালের বিচি বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায় তাছাড়া তরকারি ও ভর্তা করে খেলেও বেশ মজা লাগে। ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে ৬.৬ গ্রাম আমিষ আছে ও ২৫.৮ গ্রাম শর্করা আছে। সবার জন্যই আমিষসমৃদ্ধ বিচি উপকারী। আমাদের বাসাবাড়িতে, পতিত জমিতে বেশি বেশি করে কাঠাল গাছ লাগানো উচিত। যাতে করে আমাদের কারও এ ভিটামিনের অভাব না হয়।

আম কেন খাবেন?

আমের আছে নানা গুণাগুণ। পাকা আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও খলিনজ লবন। তাছাড়া এতে পাওয়া যায় প্রচুর আঁশ ও ক্যারোটিন। যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। পাকা আম আপনার চোখের দৃষ্টি যেমন বাড়ায় তেমনি জ্বর কিংবা কাশি থেকেও সুরক্ষিত রাখে। আমে আছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে থাকে। একটি পাকা আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা শরীরে রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। আম হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে এবং যাদের হাড়ের সমস্যা আছে তাদের জন্যও আম খুব উপকারী একটি ফল। আমে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে আম খুব কার্যকর। আম হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়, আমে থাকা এনজাইম প্রোটিন উপাদানগুলো সহজেই ভেঙে ফেলতে পারে। এতে খাবার হজম হয় দ্রুত, বাঁচা যায় পাকস্থলী সংক্রান্ত অনেক রোগ থেকেও। আম কোলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। খাবারের তালিকায় আম থাকাটা খুব উপকারি। আম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অল্প পরিমাণে আম- শরীরের কার্যক্ষমতা বড়াতে সহায়তা করে। নানা ধরণের রোগ থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমের জুড়ি নেই। তাই আমের সিজনে বেশি বেশি আম খান ও সুস্থ থাকুন।

লিচু কী উপকার করে?

রসালো লিচু কার না পছন্দ! এর স্বাদ ও রসের কারণে সবাই পছন্দ করে। অন্যদিকে পুষ্টিগুণে ভরপুর লিচু। লিচু বেশি খেয়ে ফেললে কিছু অপকারও হয়। তাই লিচু খাওয়ার পূর্বে আমরা জেনে নিই এর উপকারিতার পাশাপাশি কী অপকারিতা রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে আছে জলীয় অংশ ৮৪ দশমিক ১, খাদ্যশক্তি ৬১ ক্যালরি, শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ গ্রাম ও ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম।

লিচু শরীরে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায়। লিচুতে ভিটামিন সি আছে, যা ত্বক, দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী। ফ্ল্যাভানয়েডস নামের একটি উপাদান থাকে লিচুতে, যা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। পাকা লিচু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে। কারণ লিচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। লিচুতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের রক্ত ও নালিতে চাপ কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে।

লিচুর কিছু অপকারিতাও আছে। যেমন লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি হতে বাধা প্রদান করে। যে কারণে শিশুরা খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেলে শরীরে শর্করা কমে শিশুর বিমি ও খিঁচুনি হয়। অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই শিশুদের খালি পেটে লিচু খাওয়া থেকে বিরত রাখবো। ডায়াবেটিস রোগীরা ঔষধ সেবনের মাধ্যমে শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তারা যদি অতি মাত্রায় লিচু খেয়ে ফেলেন তবে তাদের শরীরে শর্করা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লিচু একটি গরম ফল তাই অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নষ্ট হয়। ফলে গলা ব্যাথা ও নাক দেয়ি রক্ত পড়ার মত সমস্যা তৈরি হতে পারে। লিচুর অপকারের থেকে উপকারের ভাগই বেশি। পুষ্টিগুণে ভরপুর লিচু আমাদের জীবনকে আনন্দিত করুক।

কলা খাওয়ার উপকারিতা

সকালের নাস্তার টেবিলে অনেকেই কলা রাখেন। কলা বাংলাদেশের সকল জেলায়ই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর কলা। কলাতে আছে মিনারেল, ভিটামিন আর ফাইবার যা শরীরের জন্য উপকারী। এছাড়া ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। একটি মাঝারি মাপের কলায় প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে। তাই প্রদিদিন একটি করে কলা খাওয়া উচিত। কলা মিষ্টি হওয়ার কারণে ডায়াবেটিসে সমস্যা হতে পারে বলে অনেকে মনে করে থাকেন। তারা মনে করেন কলা খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। কলায় জিআই ভ্যালু কম থাকে। তাই ডায়াবেটিস যাদের আছে তারাও কলা খেতে পারেন।

এনার্জি বাড়াতে কলার জুড়ি নেই। তাই খুব বেশি ওজন কমে গেলে বা শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে কলা খেতে পারেন। কলায় থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় শক্ত রাখতে সহায়তা করে। কলায় থাকে পেকটিন নামে একটি ফাইবার যা কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। কলা হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। একটি কলায় থাকে ৩ গ্রাম ফাইবার যা খুব তারাতারি হজম হয়ে যায়। ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি কলায় রয়েছে ক্যারোটিনয়েডের মতো এ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

কলাতে আছে ম্যাঙ্গানিজ যা ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে। ম্যাঙ্গানিজ কোলাজেন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। কলা ত্বকের ক্ষতি হওয়া ও বলিরেখা দূর করতে সহায়তা করে। কলাতে থাকে ইলেক্ট্রোলাইট যা শরীরকে আর্দ্র রাখে। শরীরের খনিজ ভারসাম্য ঠিক রাখে ও পেশির টান পড়া কমাতে কলা উপকারী ভূমিকা রাখে। কলাতে প্রচুর পরিমাণ আঁশ ও এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকাতে এটি শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে।

Leave a Comment