শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রতিটি বাবা ও মায়ের জন্য একটি বড় দায়িত্ব। শিশুরা জীবনের শুরুতে নানা ধরনের রোগ এবং সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে, তাই তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো।

শিশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা

শিশুকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। এর মাধ্যম তার সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়। ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে নিয়মিত শিশুদের ওজন, উচ্চতা এবং অন্যান্য শারীরিক পরিমাপগুলো পরীক্ষা করা দরকার।

শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা প্রদান করা

টিকা শিশুদের বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। তাই সময়মতো টিকা প্রদান করা খুবই গুরত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের টিকা দেওয়া হয়, শিশুর জন্মের পর পরই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে শিশুকে কখন কোন কোন টিকা দিতে হবে তা জেনে নেওয়া। এবং টিকা কার্ডে উল্লেখিত সময়ে টিকা প্রদান। দশটি রোগের জন্য শিশুকে ছয়টি টিকা দিতে হয়। শিশুকে সুস্থ রাখতে চাইলে শিশুকে সবগুলো দিতে হবে।

শিশুর সঠিক পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা

শিশুর জন্য সঠিক পুষ্ঠি অত্যন্ত জরুরি। সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর শরীরের সঠিক বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দুধ, ফল, সবজি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার তাদের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।

এখানে কিছু প্রোটিন সমৃদ্দ খাবারের তালিকা প্রদান করা হলো

প্রাণীজ প্রোটিন

মাংস: মুরগির মাংস, গরুর মাংস, খাসির মাংস
মাছ: স্যামন, টুনা, সারডিন, রুই মাছ, কাতল মাছ, ইলিশ মাছ, পুঁটি মাছ, মাগুর মাছ, তেলাপিয়া মাছ, পাবদা মাছ ইত্যাদি।
ডিম: ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, পনির ইত্যাদি।

উদ্ভিজ্জ প্রোটিন

ডাল: মসুর ডাল, ছোলা, মুগ ডাল ইত্যাদি।
বীন ও মটরশুটি: রাজমা, চানা, সয়াবিন।
বাদম ও বীজ: বাদাম, আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ, চিয়া বীজ।
এছাড়া বাদামী চালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাওয়া যায়।

অন্যান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

পিনাট বাটার বা অন্যান্য বাদামের বাটার, পালং শাক এবং সবুজ শাক সবজি।
এই খাবারগুলো শিশুর দৈনিক পুষ্ঠি চাহিদা পুরণে সাহায্য করবে এবং তাদের সার্বিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ওপর গুরুত্ব প্রদান করা
শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার কাপড় পরানো এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দিতে পারলে শিশুদের নানা রোগ থেকে রক্ষা করে।

আরও যে বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন

পর্যাপ্ত ঘুম শিশুদের বিকাশে সহায়ক

শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই প্রয়োজন। বয়স অনুযায়ী শিশুদের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে। নিয়মিত রুটিন মেনে তাদের ঘুমানোর অভ্যঅস গড়ে তোলা উচিত। এতে করে তাদের শরীরের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ লাভে সহায়ক হয়।

শিশুর মানসিক সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে

শিশুদের মানসিক সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা, তাদের কথা শোনা এবং তাদের ভালোবাসা ও সমর্থন দেওয়া মানসিক স্বাস্থ্যর উন্নতিতে সহায়তা করে। শিশুদের অতি মাত্রায় ভয়ের ভিতরে বড় করলে শিশুরা আত্মবিশ^াসহীন হয়ে বড় হয়। এবং তারা বিভিন্ন কাজে গুটিয়ে থাকে। সময়মতো সাড়া প্রদান করে না।

শারীরিক কার্যকলাপের দিকে নজর রাখা

শিশুদের শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখলে তাদের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে সাহায্য করে। খেলাধুলা ও অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে।

শিশুদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখা

শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সাধারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। যেমন: রাস্তা পারাপারের সময় সতর্ক থাকা, খেলাধুলার সময় সুরক্ষার নিশ্চিত করা এবং বাড়িতে শিশু যাতে নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারে সেই রকম পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া যা পিতা-মাতার যতœ এবং সচেতনতার ওপর নির্ভর করে। উপরোক্ত পরামর্শগুলো মেনে চললে শিশুদের সুস্থ ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Leave a Comment