কবিতা কেমন করে লেখে?

কবিতা কী?
কবিতা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে আসলে কী বলা যায়? পৃথিবীর কোন কবিই কবিতার সূত্র বলে দিতে পারেননি। কবিতার সূত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলতে হয় যে, “কবিতা হচ্ছে শক্তিশালী অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত বয়ান। যা গভীর আবেগ থেকে উৎপত্তি এবং শান্তির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত” তবে এটিকেও পুরোপুরি সূত্র মানলে মানতেও পারেও নাও পারেন। আদতে কবিতার কোন সূত্র নাই। “ভাবের দ্বারা হয় কবিতা” এমনটাও কেউ কেউ বলে থাকেন।

কবিতা লিখতে হলে ছন্দ জানা প্রয়োজন আছে কী?
কবিতা লিখতে হলে ছন্দ জানার প্রয়োজন আছে। কবিতার মূল গতি প্রকৃতি নির্ভর করে এর ছন্দের ওপর। এখন ছন্দ বলতে মানুষ বুঝে থাকেন অন্তমিল। অন্তমিল দিলেই কবিতার ছন্দ হয় না। সাধারণত ছন্দ তিন প্রকার: অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত।

কবিতা লিখতে হলে আপনাকে ছন্দ জানা জরুরি। তবে একটি বিশেষ ছন্দে আপনি নাও লিখতে পারেন। যে ছন্দ জানে সে ছন্দকে ভাঙতে পারে। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে পরিমিতি বোধটা খুবই জরুরি। অনেকভাবনার পর যে রস বের হয়ে আসবে তাই তো কবিতা। তাই কবিতা সুস্বাদু।

কবিতা কিভাবে লেখা যায়?
কবিতা লিখতে হলে জ্ঞানের ভান্ডার বাড়াতে হবে। এতে করে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে। দূরকে দেখার, ভবিষ্যৎকে দেখার কৌশল রপ্ত করেত হবে। কবিতা লিখতে হলে ভাষার ওপর দক্ষতা বড়াতে হবে। নতুন নতুন শব্দ শেখা ও তার ব্যবহার জানতে হবে।

প্রথম প্রথম কবিতা লেখা শুরু করলে অগ্রজদের কবিতা বেশি বেশি পড়তে হবে। যত বেশি পড়বেন তত বেশি দক্ষতা বাড়বে। সুন্দর করে শব্দের ব্যবহার করতে পারবেন, অলংকার যোগ করতে পারবেন, ছন্দ ব্যবহারে পটু হয়ে উঠবেন আপনার কবিতা হবে নান্দনিক। আবার অনেক বড় কবি বলে থাকেন যে, কবিতায় চিত্রকল্প থাকতে হয়।

কবিতা কেন লিখতে চান?
যে কথা আপনি প্রবন্ধে বলতে পারেন না। কিংবা গদ্যে বেশি আবেদন তৈরি করবে না তা কবিতায় বলতে পারবেন অনায়াশে। “অন্তরের আলো চলে গেলে দুচোখের আলো চলে যাওয়ার থেকে বড় সর্বনাশ হয়” এই কথাটি যদি আপনি একটি গদ্যে লিখতে চান তবে এভাবে লিখতে পারবেন না। আপনাকে অনেক অনেক লাইন লিখতে হবে। কিন্তু এই একটি লাইন পড়ে পাঠক অনেক বিষয় কল্পনা করে নিতে পারছে। ব্যপকতা বেশি রয়েছে।

কবিতা লেখা শুরু করে দিন
পড়তে পড়তে রুচি গঠন হয়। আর লিখতে লিখতে হয় লেখক। আপনার চারপাশের নানা ঘটনা যা আপনার মনকে আন্দোলিত করে। একটি ধানের ওপর শিশির বিন্দুও আপনাকে আন্দোলিত করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া তার দেখা হয় নাই। এই না দেখতে পারার আক্ষেপ আর সৌন্দর্যকে আবিস্কার করার আনন্দ। আর এই আনন্দে যে কথাগুলো বেরিয়ে আসে তাই তো কবিতা হয়ে যায়। পড়ুন, লিখুন, মুগ্ধ হতে শিখুন, অন্তরের বেদনাকে চিনতে শিখুন তার পর সেই আনন্দ বেদনার গান আপনি কতটা সুন্দর করে ভাব রস যোগে পরিবেশন করতে পারেন তা নিয়ে ভাবুন ও লিখুন। আপনার কাব্যভাষা আপনার মত হওয়া চাই। আপনার নিজস্ব কোন উচ্চারণ না থাকলে সে কবিতার কোন মানে নাই।

কবিতা লিখতে চাইলে যে বইগুলো পড়লে উপকৃত হবেন
১. কবিতা কী ও কেন: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
২. কবিতার ক্লাস: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
৩. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর বাংলা কবিতার ছন্দ
৪. ড. মাহবুবুল হক এর বাংলা বানানের নিয়ম

বাজারে আরও প্রচুর বই রয়েছে। সংগ্রহ করে পড়তে হবে। পড়লেই কবিতা লেখার পথটাও সহজ হবে।

Leave a Comment