বাংলা বানান বিভ্রান্তি

একই ধরণের উচ্চারণে বাংলা অনেক শব্দ রয়েছে। এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা অনেকসময় ভুল ব্যবহার করে থাকি। একটু সচেতন হলে এই ধরনের ভুল হওয়া থেকে বাঁচা যায়।

বেশি এবং বেশীর মারামারি


একবার এক প্রকাশনার জন্য লেখায়- ‘অনেক’ অর্থ বুঝাতে “বেশী” বানান ব্যবহার করা হয়েছে। বানান বিষয়ে আমি খুব খুঁতখুঁতে না! অসাবধানে অনেক ভুল বানান লিখে থাকি। তবে এই “বেশী” এর প্রয়োগ যে ভুল এটা ধরতে পারলাম। সব ঠিক করে দিলাম “বেশি” লিখে। এই বেশি এবং বেশী এর উচ্চারণ এক, অর্থ আলাদা। যতটুকু জানি “বেশী” শব্দের অর্থ বেশধারী, “বেশি” শব্দের অর্থ খুব, অনেক। সুতরাং অনেক অর্থ বুঝাতে বেশি লিখতে হবে। ঠিক করে দিলাম। প্রকাশনা হাতে আসার পর লেখক খুব ত্যক্ত বিরক্ত হলেন। তিনি দেখলেন তার সব “বেশী” কে যেন “বেশি” করে দিয়েছে। আমি চুপ। তারপর একটু পরে বললাম আসলে “ি” দিয়ে যেটা লেখা হয়েছে ওটাই ঠিক। তিনি ত্যাড়ামো করতে থাকলেন। আমি চুপ থাকলাম।বেশি: বেশি বেশি ফল খাবে।বেশী: বাউল-বেশী লোকটির বেশটা ভালো, সুরে ডাব্বা।

আত্মা লিখতে গিয়ে আত্বা


ফেসবুকে অনেক লেখায় দেখি- প্রাণ বুঝাতে অনেকে “আত্মা” বানান “আত্বা” হিসেবে লিখেন। প্রাণিদেহের চৈতন্যময় সত্তা বুঝাতে “আত্মা”ই লিখুন। আনেকের “আত্বা” বানান দেখে অনলাইন অভিধানে খুঁজে দেখলাম তেমন কিছুই পেলাম না। এটার কোন অর্থ থাকলে সুধীজন জানাবেন।তবে আত্ত বলে শব্দটির সামনে “া” (আত্তা) বসিয়েও অনেকে “আত্মা” লিখেন। ধরিয়ে দিলে বলেন বুঝলেই হল। কিন্তু এই আত্ত এর মানে হচ্ছে আয়ত্ত, অধিন, বশীভূত। সুতরাং মনের ইচ্ছায় ভাষাকে ভুলভাবে ব্যবহার না করে সঠিকভাবে করার চেষ্টা করি। এর জন্য হওয়া প্রয়োজন একটু খুঁতখুঁতে। অনবরত চর্চার মাধ্যমে পরিশুদ্ধভাবে ভাষার ব্যবহার করা যায়।

পড়া বনাম পরা


পড়া বনাম পরাদুটো শব্দের উচ্চারণ এক। কিন্তু এই দুটি শব্দ ব্যবহারে প্রায়ই অনেকে ঝামেলা তৈরি করেন। অনেকদিন পূর্বে ফেসবুকে এক লেখায় পরিধান করা অর্থে আমি “পড়া” শব্দ ব্যবহার করলাম। সচেতনভাবে না। কয়েক লাইন পরেই পরিধান করা অর্থে “পরা” লিখেছি। এটাও সচেতনভাবে না। বড় ভাই কবি মিজান মল্লিক ইনবক্সে বললেন আপনি পরিধান অর্থে “পড়া” লিখেছেন। এটা বই পড়া হয়ে গেছে। ফেসবুক স্টেটাস সম্পাদনা করে পরিধান অর্থে “পরা” লিখলাম। জেনে না জেনে উচ্চারণে মিল থাকার কারনে আমাদের এই ভুল মাঝে মাঝেই হয়।পড়া: বই পড়া।পরা: পরিধান করা।আবার পড়ে যাওয়া কিন্তু বই পড়া না- ওটা চিৎপটাং!

সুধি ও সুধী


চিঠি কিংবা নিমন্ত্রণ পত্রে প্রিয় সুধি/সুধী দুই ধরনের সুধী/সুধি দেখতে পাই। দুটোর উচ্চারণ এক কিন্তু বানানে ভিন্ন। এখন পত্রে কোনটা লিখবো?সুধি শব্দের অর্থ: বোধ, চেতনা, চৈতন্য, হুঁশ, স্মৃতি, অনুভব, সহজ-সরল, অনুধাবন, স্মরণশক্তি।সুধী শব্দের অর্থ: বিচক্ষণ, জ্ঞানী, পণ্ডিত, উত্তম, বিদ্বান, মান্যবর।আমরা অনেক সময় চিঠিতে সুধী লেখার স্থলে সুধি লিখে থাকি। নিমন্ত্রণ জানাতে যে অর্থে সুধি লেখা হয় সে অর্থ “সুধি” লেখার মাধ্যমে পাওয়া যায় না। সম্বোধন করে লিখলে “সুধী” ঠিক হবে “সুধি” ভুল হবে।সুধি ও সুধী দুটো বানানই ঠিক- অর্থ আলাদা। সুধি- বাংলা শব্দ এবং সুধী- তৎসম শব্দ।

Leave a Comment