বাংলা বানানের নিয়ম (তৎসম শব্দের বেলায়)

বাংলা বানানের নিয়ম (তৎসম শব্দের বেলায়)
বাংলা বানানের নিয়ম গোলমেলে বলে অনেকেই মনে করেন। অনেকে বলে থাকেন বাংলা একাডেমি “ী” তুলে দিয়েছে। সব বানানে “ি” করে দিয়েছে। বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাব ছিলো এখনও আছে। সংস্কৃত ব্যাকরণে সংস্কৃত ভাষার শব্দ নিয়ে কোন সমস্যা কখনোই ছিলো না। ঝামেলা হতে থাকে তৎসম শব্দের বেলায়। তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, অর্ধ-তৎসম এই রকম বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলায় প্রচুর শব্দ ঢুকে বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারকে করেছে পরিপূর্ণ। কিন্তু সংস্কৃত ব্যাকরণে এই শব্দের অভিভাবকক্ত গ্রহণ করেনি। ফলে সংস্কৃত শব্দ ছাড়া এই বিশাল শব্দ ভান্ডার এর বানানে জটিলতা তৈরি হয়। ১৯৮৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়ন করে। এরপর ১৯৯২ সালে এপ্রিলে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মনির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে এটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। ২০০০ সালে নিয়মের কিছু সূত্র সংশোধিত হয়। ২০১২ সালে পুনরায় পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই আলোচনায় বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আলোচনায় সহায়ক হিসেবে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিক “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” বইটি থাকবে। বইটি খুবই প্রয়োজনীয়। আপনার ঘরে বইয়ের সংগ্রহে বইটি রাখতে পারেন।

তৎসম শব্দের বেলায়
তৎসম শব্দ
১.১
এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিμম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।

১.২
যেসব তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং তার কারচিহ্ন ি ু হবে।
যেমন: কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, চুল্লি, তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পঞ্জি, পদবি, পল্লি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, যুবতি, রচনাবলি, লহরি, শ্রেণি, সরণি, সূচিপত্র, ঊর্ণা, উষা।

১.৩
রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন:অর্জ্জন, ঊদ্ধর্¦, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য, বার্দ্ধক্য, মূর্চ্ছা, সূর্য্য ইত্যাদির পরিবর্তে যথাμমে অর্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম, কার্তিক, কার্য, বার্ধক্য, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি হবে।

১.৪
সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) হবে। যেমন: অহম্ + কার = অহংকার এভাবে ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন। সন্ধিবদ্ধ না হলে ঙ স্থানে ং হবে না। যেমন: অঙ্ক, অঙ্গ, আকাক্সক্ষা, আতঙ্ক, কঙ্কাল, গঙ্গা, বঙ্কিম, বঙ্গ, লঙ্ঘন, শঙ্কা, শৃঙ্খলা, সঙ্গে, সঙ্গী।

১.৫
সংস্কৃত ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম-অনুযায়ী সেগুলিতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন: গুণী: গুণিজন, প্রাণী: প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী: মন্ত্রিপরিষদ। তবে এগুলির সমাসবদ্ধ রূপে ঈ-কারের ব্যবহারও চলতে পারে। যেমন:গুণী: গুণীজন, প্রাণী: প্রাণীবিদ্যা, মন্ত্রী: মন্ত্রীপরিষদ।

ইন-্ প্রত্যয়ান্ত শব্দের সঙ্গে -ত্ব ও-তা প্রত্যয় যুক্ত হলে ই-কার হবে। যেমন:কৃতী: কৃতিত্ব, দায়ী: দায়িত্ব, প্রতিযোগী: প্রতিযোগিতা, মন্ত্রী: মন্ত্রিত্ব, সহযোগী: সহযোগিতা।

১.৬
বিসর্গ (ঃ)
শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। যেমন:
ইতস্তত, কার্যত, ক্রমশ, পুনঃপুন, প্রথমত, প্রধানত, প্রয়াত, প্রায়শ, ফলত, বস্তুত, মূলত।
এছাড়া নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে শব্দমধ্যস্থ বিসর্গ-বর্জিত রূপ গৃহীত হবে। যেমন: দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস।

Leave a Comment