ডিএসএলআর না মিররলেস ক্যামেরা? কোনটা কিনবো?

ডিএসএলআর না মিররলেস ক্যামেরা? কোনটা কিনবো?

ছবি তোলা অনেকের সখ। কারও বা পেশা। প্রযুক্তির দ্রুত গতির কাছে মানুষকে তাল মেলাতে হচ্ছে। দিন বদলের সাথে সাথে ক্যামেরা কোম্পানিগুলো তাদের ক্যামেরায় প্রযুক্তিগত দিকের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। ডিএসএলআর ক্যামেরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে এতদিন। এই সময়ে এসে মিররলেস ক্যামেরাগুলো ডিএসএলআর ক্যামেরাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। গ্রাহক ক্যামেরা কেনার সময় দ্বিধায় পড়ে। সে কোন ক্যামেরাটা বেছে নেবে? ডিএসএলআর না মিররলেস ক্যামেরা! চলুন দেখে নিই ডিএসএলআর ও মিররলেস ক্যামেরার মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?

ডিএসএলআর এর মানে কী?

ডিএসএলআর এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে: ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স। এর আগে ছিলো এসএলআর। এসএলআর এর মানে হচ্ছে সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা। পূর্বে এসএলআর ক্যামেরায় ফিল্ম ব্যবহার করা হত। ফিল্মকে ডেভলপ করার জন্য ডার্ক রুমের প্রয়োজন হত। ডিএসএলআর এমন একটি ক্যামেরা যা অপটিক্স এবং একক/সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্ট যা ডিজিটাল সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। ডিএসএলআর একটি ডিজিটাল ক্যামেরা যা লেন্স থেকে ভিউফাউন্ডারে আলো ফেলতে মিরর ব্যবহার করে। ডিএসএলআর ক্যামেরায় আলো ল্যান্স দিয়ে প্রবেশ করে ক্যামেরার ভিতরে আসে। ক্যামেরার ভিতরে আলো গিয়ে 45% এঙ্গেলে বসানো মিররে পড়ে। সেখান থেকে আলো ক্যামেরার উপরের দিকে থাকা ম্যাট ফোকাসিং স্ক্রিন পেরিয়ে পেন্টাপ্রিজমে প্রবেশ করে। ডিএসএলআর এর ডি এর কোন কাজ নেই। পুরো প্রক্রিয়াটি মূলত এসএলআর। যেহেতু পুরো বিষয়টি এখন আর ম্যানুয়ালি হচ্ছে না, পুরো প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাই এসএলআর এর পূর্বে ডি অতিথি হিসেবে বসে হয়েছে ডিএসএলআর অর্থাৎ ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স।

মিররলেস ক্যামেরা

মিররলেস কথার মাঝেই এই ক্যামেরার বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে। ডিএসএলআর এর মত এখানে কোন মিরর নেই। অনেক সময় ডিএসএলআর ক্যামেরায় ভিউ ফাউন্ডারে দেখেও সঠিক ছবি পাওয়া যায় না। ফটোগ্রাফার বার বার ছবি তুলে মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখে চেক করে নেয়। মিররলেস ক্যামেরার ক্ষেত্রে এটি করতে হয় না। সরাসরি মনিটরে দেখেই ছবির ফোকাস, লাইট ইত্যাদি সহজেই দেখা যায়। মিররলেস ক্যামেরায় অটো ফোকাসের যুগান্তকারী উন্নতি হয়েছে। মিররল্যাস ক্যামেরার মিরর না থাকার কারণে ক্যামেরা কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এই ক্যামেরা যে কোন আলোতে ছবি তুলতে পারে। মিরর ছাড়া এই প্রযুক্তির কারণে ক্যামেরাগুলো হয়েছে অনেক হালকা। মিররলেস ক্যামেরাগুলোর অটোফোকাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসায় এই ক্যামেরাগুলো আর ছবি তোলার ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে না। নাটক, মিউজিক ভিডিও, ব্লগিংয়ের জন্য এই ক্যামেরা আদর্শ রূপে এসেছে ব্যবহারকারীদের কাছে। মিররল্যাগ প্রযুক্তি এমনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যে, ডিএসএলআর খুব দ্রুত মার্কেট থেকে উধাও হয়ে যাবে। নাইকন ঘোষণা দিয়েছে তারা আর ডিএসএলআর ক্যামেরা তৈরি করবে না। সনি, ফুজিফিল্ম, নাইকন, ক্যানন ক্যামেরা কোম্পানিগুলো এখন মিররল্যাস ক্যামেরা প্রস্তুতের দিকে মনযোগি হয়েছে। তারা ডিএসএলআর ক্যামেরার থেকে এখন মিররলেস ক্যামরো উৎপাদেনে বেশি আগ্রহি।

অটোফোকাস ও স্পিড

অটোফোকাস ও স্পিডের জন্য ডিএসএলআর এবং মিররল্যাস প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। তবে সনি ব্রান্ডের ক্যামেরাগুলো ডিএসএলআর থেকে ভালো অটো ফোকাস দিয়ে থাকে। মিররলেস ও ডিএসএলআরে আই ডিটেকশন ও ফেস ডিটেকশন সেন্সর রয়েছে যার মাধ্যমে অটোফোকাস এর মান আরও অনেক বেশি বেড়েছে। তবে আমার মতে অটোফোকাসের জন্য মিররলেস ক্যামেরা ডিএসএলআর ক্যামেরার থেকে অনেক বেশি সুবিধা প্রদান করছে। মিররলেস ক্যামেরাগুলো কম আলোতেও ফেজ সনাক্ত করে এর বিশেষ সেন্সরের কারণে।

ইমেজ কোয়ালিটি

ডিএসএলআর ও মিররলেস ক্যামেরা দিয়ে হই রেজুলেশনের ছবি তোলা যায়। তবে মিররল্যাস মিড র‌্যাঞ্জের ক্যামেরা দিয়েও অনেক বেশি মূল্যের ডিএসএলআর ক্যামেরার মানের ছিবি তোলা যায়। মিররল্যাস ক্যামেরায় উচ্চমানের ইমেজ সেন্সর ব্যবহার করা হয় ফলে ছবি তোলার জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণে আলো ক্যাপচার করতে পারে। ইমেজ কোয়ালিটি ও ছবি তোলার অভিজ্ঞতা হয় নান্দনিক।

ভিডিও কোয়ালিটি

ছবি তোলার পাশাপাশি ডিএসএলআর ক্যামেরাগুলো টিভি নাটক তৈরিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভিডিও ক্যামরার স্থান দখল করে নেয় ক্যাননের কিছু জনপ্রিয় ক্যামেরা। এভাবে নাইকনের কিছু ক্যামেরাতে অটোফোকাস, আই ডিটেকশন ও ফেস রিকগনিশন সেন্সর থাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে মিররলেস ক্যামেরাগুলোতে অনচিপ ফেস ডিটেকশন ফোকাস সেন্সর ভালো হওয়ায় মিররলেস ক্যামেরার সুবিধা বেশি। সোনির আলফা সিরিজের ক্যামেরাগুলো ভালো মার্কেটপ্লেস দখল করতে পেরেছে। অনেকে ডকুমেন্টারি তৈরি, ফিল্ম মেকিংয়ের ক্ষেত্রে মিররল্যাস ক্যামেরা ব্যবহার করছে। হালকা ও উন্নত রেজুলেশনের সুবিধা থাকায় এই ক্যামেরাগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে বড় বড় সিনে ক্যামেরার সাথে প্রতিযোগিতা করছে।

কী কিনবেন? ডিএসএলআর না মিররল্যাস ক্যামেরা?

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ডিএসএলআর একসময় আর মার্কেটে থাকবে না। ফিল্মের ক্যামেরার প্রতি যতেই নস্টালজিক হই না কেন- সেই ফিল্মের ক্যামেরার প্রয়োজন আর এই সময়ে নেই। সেভাবে একদিন ডিএসএলআর ক্যামেরারও প্রয়োজন ফুরুবে। আপনি যদি নতুন কোন ক্যামেরা কিনতে চাচ্ছেন তবে মিররল্যাস ক্যামেরা বেছে নিন। আর যদি আপনার কম বাজেট থাকে, কিংবা চাইছেন টুকিটাকি ছবি তুলে হাত পাকাবেন তবে ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনতে পারেন। ডিএসএলআর ক্যামেরা এখনও জনিপ্রিয় কারণ এর লেন্স অপশন বেশি রয়েছে এবং দামে সস্তা। তবে দিন যত গড়াচ্ছে মিররলেস ক্যামেরাগুলোর ল্যান্সের তালিকা বড় হচ্ছে। এবং দামেও হাতের নাগালে আসতে শুরু করেছে।

Leave a Comment